সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬



ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল থেকে

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মানের চায়ের একটি অংশ শ্রীমঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করা হয়। এখানে চা বাগানের পাশাপাশি রয়েছে রাবার, লেবু আনারসের বাগান।

বাংলাদেশের লেবুর চাহিদার বড় যোগান আসে শ্রীমঙ্গল থেকে। সবুজ প্রকৃতির মায়াবি রূপের কারণে শ্রীমঙ্গলের রয়েছে আলাদা পরিচিতি। শুধু দেশে নয়, বিদেশের পর্যটনপিপাসুদের কাছেও এই জায়গাটির কদর রয়েছে। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গলের অবস্থান প্রথম সারিতে।

নিম্নে স্থানের কিছু বর্ণনা দেয়া হল....

হাকালুকি হাওর:
১৯২ বর্গ কি.মি. আয়তনের বিশাল জলরাশি- হাকালুকি হাওর। শ্রীমঙ্গল থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। এখানকার সাধারণ প্রকৃতি অসাধারণ এক বিষয়। তার ওপর বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এই হাওরে বসে অতিথি পাখির মেলা। দেশের সীমানার বাইরে দূর দূরান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ অতিথি পাখি এখানে এসে টানা কয়েক মাসের জন্য অস্থায়ী নিবাস গড়ে তোলে। পাখির কলরবে মুখোর হয়ে যায় হাকালুকির প্রকৃতি। হাওরের বুকে জমে ওঠা পাখির কলতান উপভোগ করতে শত শত পর্যটক ভিড় জমান শীতের সময়। এই বর্ষায় হাওরের আবার অন্য রূপ দেখা যায়।

মাধবকুণ্ড ঝরনা:
বাংলাদেশের উচ্চতম ঝরনা এটি। প্রায় দুইশ ফুট উঁচু থেকে প্রবল বেগে অনর্গল পানি ঝরে। পানির প্রচণ্ড গতির কারণে নিচে সৃষ্টি হয়েছে একটি পুকুর। পর্যটকদের কেউ কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেমে পড়েন পুকুরের হিমশীতল জলে। দেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ঝরনা মাধবকুণ্ড দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক আসেন।

পরীকুণ্ড ঝরনা:
সচরাচর লক্ষ করা যায় দর্শনার্থীরা কেবল মাধবকুণ্ড ঝরনা দর্শন করেই ফিরে আসে। তাদের বেশির ভাগেরই জানা নেই মাধবকুণ্ডের নিকটেই রয়েছে পরীকুণ্ড নামে দৃষ্টিনন্দন আরো একটি ঝরনা। মাধবকুণ্ড যেতে পায়ে হাঁটা পথের মাঝামাঝি গিয়ে ডান দিকে নেমে গেছে আর একটি পথ। পথটি ধরে নামলেই ছরা, তারপর ছরা ধরে হাঁটতে হবে বিশ থেকে পঁচিশ মিনিটের মত। দেখবেন আপনার সামনেই ঝরছে পরীকুণ্ডের অনর্গল ধারা। মাধবকুণ্ড পরীকুণ্ড যাওয়ার পথে দুপাশে উঁচু-নিচু পাহড় টিলাগুলো দেখবেন চা গাছে আবৃত।

শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা:  
ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র চিড়িয়াখানা শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। শীতেশ নামক স্থানীয় এক প্রকৃতিপ্রেমী একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এই মিনি চিড়িয়াখানা। দিনে দিনে তার সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে অনেক প্রজাতির পশুপাখি। সাদা বাঘ, মুখপোড়া বানর, সজারু, হরিণ, উল্লুক, ধনেশ পাখি, একাধিক প্রজাতির কাঠবিড়ালি এর অন্যতম। শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন থেকে চিড়িয়াখানায় পৌঁছতে পনেরো টাকা রিকশা ভাড়া লাগে। ভেতরে প্রবেশ করতে দশ টাকার টিকিট কাটতে হয়।

সাত রং চা:  
চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল গেলেন অথচ সাত রং চায়ের স্বাদ গ্রহণ করলেন না, তা হয় না। একই গ্লাসের মধ্যে স্তরে স্তরে সাজানো সাত রং এর চা! চা ভর্তি গ্লাসটি যখন আপনার সামনে পরিবেশিত হবে হয়তো বিস্মিত হয়ে ভাববেন, তরল পানীয়কে কীভাবে সাতটি স্তরে সাজানো সম্ভব! ব্যাপারটি বিস্ময়েরই বটে। অর্ডার করলে গোপন ঘরে প্রস্তুত করার পর সেই চা আপনাকে পরিবেশন করা হবে। প্রতি গ্লাসের মূল্য ৭০-৯০ টাকা।

ক্ষুদ্র জাতিসত্তা পল্লী:  
দেশের চা বাগানের প্রায় নব্বই শতাংশ শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। এই বাগানের শ্রমিকরা প্রায় সকলেই মণিপুরী এবং খাঁসি (খাঁসিয়া) জাতিসত্তার অধিকারী। সেই ইংরেজ আমলে যখন চা চাষের শুরু, তখন থেকে আজ পর্যন্ত শ্রমিক বলতে তারাই। যুগে যুগে ঘটেছে তাদের বংশ বিস্তার। বর্তমানে তারা স্থানীয় জনসংখ্যার মোটামুটি একটি অংশ হয়ে উঠেছে। আপন সংস্কৃতিতে বৈচিত্রময় তাদের জীবন। অনাদীকালের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে তারা হৃদয়ে। এটা তারা পালনও করে যা আমাদের জন্য দেখার মত একটি বিষয় হয়ে ওঠে। পর্যটকেরা চাইলেই ঘুরে দেখতে পারেন তাদের পল্লী বা বসতি।

টি এস্টেট:
পর্যটকেরা চাইলে শ্রীমঙ্গলের চা কারখানাও ঘুরে দেখতে পারেন। টি রিসার্স ইনস্টিটিউট হতে পারে পরিদর্শনের অন্যতম একটি জায়গা। দেখতে পাবেন চা প্রস্তুত প্রণালী। বাগানের ভেতর শ্রমিকদের সঙ্গে খানিকটা সময়ও কাটানো যেতে পারে। শ্রীমঙ্গলে থাকার জায়গা হিসেবে টি রিসার্স ইনস্টিটিউটেরটি রিসোর্টঅত্যান্ত চমৎকার একটি জায়গা। টিলার উপর বিশাল জায়গা নিয়ে নির্মিত রিসোর্টে রয়েছে দশ-বারোটি কটেজ। বৃক্ষের ছায়া তলে অনেক দূরে দূরে একেকটি কটেজ। বড়সর রেস্তোরাঁর সঙ্গে রয়েছে পুরনো আমলের সুইমিংপুল। পাশেই নেট দিয়ে ঘেরা জায়গার মধ্যে চরে বেড়ায় বেশ ককেটি চিত্রল হরিণ। কেবল রিসোর্ট সীমানার মাঝে অবস্থান করে আশপাশের চা বাগান দেখেই কাটিয়ে দেয়া সম্ভব দুদিন দিন।

মাধবপুর লেক:  
কোন কালে সৃষ্টি হয়েছে এই লেকের তা কেউ বলতে পারে না। সমতল থেকে উঁচুতে পাহাড়ে লেকটির অবস্থান। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর। সময় করে লেকের চারপাশ প্রদক্ষিণ করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা হবে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।

নিজ ব্যবস্থাপনাতেই শ্রীমঙ্গল তার আশপাশের এলাকা ভ্রমণ করা সম্ভব। ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ আরামদায়ক। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস এবং সুরমা মেইল কমলাপুর থেকে সিলেট নিয়মিত যাতায়াত করে। আপনাকে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। ছাড়াও  ঢাকা সায়দাবাদ, মহাখালী ফকিরাপুল থেকে সারাদিনই বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্যামলী, সোহাগ পরিবহণ, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া এই রুটের অন্যতম বাস।

শ্রীমঙ্গল, সিলেট ভ্রমণে টুর অপারেটরদের বছরজুড়েই অফার থাকে। ,৮০০ থেকে ,৫০০ টাকায় তাদের মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসা সম্ভব। কোনো কোনো অপারেটর প্যাকেজে সিলেটসহ শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের অফার দিয়ে থাকে

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Blogger Templates