গন্তব্য: টাঙ্গাইলের মহেড়া জমিদার বাড়ি
আনন্দ লজ।
জমিদার বাড়ি মানেই ইতিহাসের সাথে দেখা হওয়া, ঐতিহ্যের সাথে দেখা
হওয়া। সারা ঢাকায় নানান দিকে ছড়িয়ে আছে অনেক পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ি যেখানে এক সময়
ছিল শানশওকত, চাকচিক্য। সেই সময় আর নেই, তবু কারুকাজ করা বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে
সদর্পে। আজ এতটা সময় পেরিয়ে ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষেরা এখনো ছুটে যায় এই নিদর্শনগুলোর
কাছে, গবেষকরা খুঁজে দেখেন, জানার চেষ্টা করেন চোখে না দেখা জীবনকে।
টাঙ্গাইলের বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ির মধ্যে মহেড়া
জমিদার বাড়ি অন্যতম। বাড়িটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে সরকারি তত্ত্বাবধানে। হুবহু আগের
মতোই রাখা হয়েছে এর প্রতিটি কলাম, দেয়াল। তবে রঙ করা হয়েছে নতুনভাবে। বর্তমানে
বাড়িটি পুলিশ একাডেমির কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
বিশাল জমিদার বাড়িটির প্রধাণ ফটক দুইটি। এখানে আছে
কাছারি ঘর, নায়েব সাহেবের ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘি আর তিনটি লজ। লজ তিনটির নাম
চৌধুরী লজ, আনন্দ লজ এবং মহারাজ লজ। বাড়ীর সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি নাম বিশাখা
সাগর। ভবন গুলোর পিছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দু'টি পুকুর।
জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করলে প্রথমেই যে ভবনটি চোখে পড়ে
তার নাম চৌধুরী লজ। মিষ্টি গোলাপি রঙ এর বাড়িটির ছাদের দেয়ালটি চমৎকার নকশা করা।
এর পরের ভবন দু'টি আনন্দ লজ আর মহারাজ লজ। আনন্দ লজ সবচেয়ে সুন্দর। এর সামনে বিশাল
বাগান আর সিংহদ্বার। বাগানে বাঘ, হরিণ আর বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি রয়েছে। সেই
আমলে জমিদাররা পশু-পাখি পুষতেন। সেই স্মৃতিতেই বুঝি মূর্তিগুলো বানানো।
মহারাজ লজ সাদা আর নীলের সমন্বয়ে তৈরি একটি ভবন।
এখানে আছে ১২ টি ঘর, আছে একটি ঝুলন্ত বারান্দা যা শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরো আছে কালীচরণ লজ, রানী মহল। কালীচরণ লজের সামনেই ছিল পূজামণ্ডপ, যার সামনে বসে
পূজা করতেন জমিদাররা।
শোনা যায়, ১৮৯০ সালে কালীচরন সাহা এবং আনন্দ সাহা ২
ভাই এখানে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। কলকাতায় লবন আর ডালের ব্যবসা করে তারা অনেক
আয় করেছিলেন। জমিদারি প্রথা চালু হলে তারা এখানে শাসন করতে শুরু করেন। দুজনেই
ছিলেন অত্যাচারী। তবে তাদের উত্তরসূরি রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন খুবই দয়ালু। তার
তদারকিতে এই এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যালয় গড়ে ওঠে।
১৯৭১ সালে জমিদার বাড়িতে ঘটে নারকীয় কান্ড। রাজাকার
আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাক বাহিনী হামলা চালায় এখানে। জমিদার কূলবধু
যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড়
করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তারা। তাদের মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের
শিক্ষক পন্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনিন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং
নোয়াই বণিক ছিলেন। এরপরই জমিদার পরিবার দেশত্যাগ করেন। এলাকার সবাইকে ভালোবাসতেন
তারা, সবসময় সুখে দুঃখে পাশে থাকতেন। কিন্তু তাদেরকেই ছেড়ে যেতে হল দেশ! পরে এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প
স্থাপিত হয়।
বর্তমানে জমিদার বাড়িতে ভ্রমণের পাশাপাশি পার্কে ঘুরে
বেড়াতে পারবেন। সাথে আছে মিনি চিড়িয়াখানা। পিকনিক স্পটে অনায়াসে করতে পারেন
পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক পিকনিকের আয়োজন।
টিকেট মূল্য:
মহেড়া জমিদারবাড়িতে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা।
কিভাবে যাবেন:
ঢাকার মহাখালী বাস স্টেশন থেকে বিনিময়, নিরালা, ধলেশ্বরী, ঝটিকা
ইত্যাদি বাস যায় টাঙ্গাইল। ভাড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এসব বাসে চড়ে নাটিয়াপাড়া
বাসষ্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষমান সিএনজি বেবীটেক্সী যোগে (ভাড়া ৭৫ টাকা, শেয়ারে জন
প্রতি ১৫ টাকা) যেতে পারবেন। মহাসড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেড়া, টাঙ্গাইল নামে
দিক নির্দেশনা ফলক আছে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন তারা যে কোন ঢাকাগামী বাসে
টাঙ্গাইল পার হয়ে ১৭ কিঃমিঃ পর নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নেমে একইভাবে যেতে পারেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন